সুপারিশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সময় বেঁধে দেওয়ার চিন্তা কমিশনের

🗓️
Lead (প্রধান সারসংক্ষেপ):
জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধানসংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার চিন্তা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন বিবেচনা করছে, আগামী সংসদ গঠনের ১৮০ দিনের মধ্যে সংস্কার কার্যক্রম শেষ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও কমিশন আশা করছে, আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
🧭
সংবিধান সংস্কারে সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার ভাবনা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দুইজন দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছেন, জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়নে সময়সীমা নির্ধারণের মূল উদ্দেশ্য হলো সংসদীয় কার্যক্রমে গতি আনা এবং সংস্কারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে থাকা থেকে রক্ষা করা।
তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, আগামী সংসদ গঠনের ১৮০ দিনের মধ্যে সংবিধানসংক্রান্ত সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রয়োজনে আলোচনার ভিত্তিতে এই সময় বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে।
তবে জামায়াতে ইসলামী প্রস্তাব দিয়েছে, “আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সব সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।” কমিশন মনে করছে, এটি বাস্তবসম্মত নয়, কারণ প্রথম অধিবেশনে অধ্যাদেশ অনুমোদন, অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা প্রদানসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকবে।
🗳️
গণভোটের ভিত্তি ও সময় নিয়ে মতবিরোধ
সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য থাকলেও গণভোটের সময়, ভিত্তি ও পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ স্পষ্ট।
কমিশনের আলোচনায় উঠে এসেছে তিনটি প্রধান প্রশ্ন:
1️⃣ গণভোটের ভিত্তি কী হবে—রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশ না সংসদীয় অনুমোদন?
2️⃣ গণভোটে কোন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে?
3️⃣ গণভোট কখন হবে—জাতীয় নির্বাচনের দিনেই, না কি আলাদাভাবে?
বিএনপি চায়, জাতীয় নির্বাচনের দিনই আলাদা ব্যালটে গণভোট হোক। দলটি মনে করে, সরকার চাইলে একটি অধ্যাদেশ জারি করে গণভোট আয়োজন করতে পারে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায়, গণভোট নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হোক এবং এটি রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশের ভিত্তিতে হোক।
⚖️
‘বিশেষ আদেশ’ জারির চিন্তা
ঐকমত্য কমিশন মনে করছে, গণভোটের আগে একটি বিশেষ আদেশ (Special Order) জারি করা প্রয়োজন। এটি গণভোটের আইনগত ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। কমিশন চায়, গণভোটের তারিখ নির্ধারণের দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরই থাকুক।
সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে জানানো হয়েছে। কমিশনের আশা, রাজনৈতিক দলগুলোও এ প্রস্তাব মেনে নেবে।
📜
৮৪টি প্রস্তাব ও সংস্কারের মূল কাঠামো
জুলাই জাতীয় সনদ গঠিত হচ্ছে ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে। এসব প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নির্বাচন কমিশনের কার্যকারিতা, স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নসহ একাধিক মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে।
যদিও বেশির ভাগ প্রস্তাবে দলগুলো একমত, কিছু বিষয়ে—বিশেষ করে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও নির্বাচনী ব্যবস্থার রূপ নিয়ে—ভিন্নমত রয়ে গেছে।
🤝
অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ও সমঝোতার প্রচেষ্টা
কমিশন বর্তমানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
গতকাল সংসদ ভবনে কমিশনের কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ–এর সঙ্গে বৈঠক হয়। বিকেলে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ এবং আইনজীবী শিশির মনির কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এর আগের দিনও জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছে কমিশন। যদিও দলগুলো এখনো আগের অবস্থানেই অনড়, কমিশন আশাবাদী—গণভোটের ভিত্তি, সময় ও কাঠামো নিয়ে সমঝোতা সম্ভব হবে।
🧑⚖️
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পরামর্শ
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেল কমিশনকে পরামর্শ দিয়েছে, সংবিধান সংস্কার বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকা আবশ্যক। তাদের মতে, সময়সীমা না থাকলে সংস্কার প্রক্রিয়া রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের আড়ালে চাপা পড়ে যেতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীও বলেছে, আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনই সংবিধান সভা হিসেবে কাজ করা উচিত। তবে কমিশন বাস্তবতার নিরিখে বলছে—১৮০ দিনের সময়সীমাই সবচেয়ে কার্যকর ও বাস্তবসম্মত হবে।
📅
সনদ স্বাক্ষর ও সুপারিশ জমা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর (শুক্রবার) অনুষ্ঠিত হবে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এর আগে বুধবার বা বৃহস্পতিবারের মধ্যে কমিশন তাদের সুপারিশ সরকারকে জমা দেবে।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন—
“জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আমরা চূড়ান্ত কাজ করছি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনায় আছি। লক্ষ্য একটাই—ন্যূনতম ঐকমত্য তৈরি করে কার্যকর বাস্তবায়নের রূপরেখা দেওয়া।”
🔍
কমিশনের আশঙ্কা ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
কমিশন মনে করছে, সংসদীয় প্রক্রিয়া ধীরগতি হলে সংস্কার ঝুলে যেতে পারে। তাই তারা চায়, সংবিধান সংস্কার আগামী সংসদ গঠনের ১৮০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হোক।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে যাচ্ছে। কিন্তু এটি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সময়নিষ্ঠা ও পারস্পরিক বিশ্বাসই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
📌
মূল পয়েন্টস সারসংক্ষেপ:
- আগামী সংসদ গঠনের ১৮০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব বাস্তবায়নের চিন্তা কমিশনের।
- গণভোটের সময় ও ভিত্তি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ।
- কমিশনের পরিকল্পনা—১৭ অক্টোবর জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান।
- সনদ বাস্তবায়নের উপায় সংক্রান্ত সুপারিশ এই সপ্তাহেই যাবে সরকারের কাছে।
- কমিশন আশা করছে—আলোচনার মাধ্যমে ন্যূনতম ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে।