রেমিট্যান্স, আমানত ও রপ্তানিতে জোর দিয়ে সোনালী ব্যাংকের বিশেষ উদ্যোগ

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ২০২৫ সালের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জনের লক্ষ্যে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ব্যাংকটি ৯০ দিনের বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সম্প্রতি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. শওকত আলী খান কর্মসূচিটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
৯০ দিনের কর্মসূচির লক্ষ্য
সোনালী ব্যাংকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এই কর্মসূচি ২ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে চলবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মূলত বার্ষিক টার্গেট পূরণ, খেলাপি ঋণ আদায়, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি, আমানত সংগ্রহ, রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ, পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং কার্যক্রম এবং বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বাস্তবায়নের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।
মো. শওকত আলী খান বলেন—
“সোনালী ব্যাংক দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। এই ৯০ দিনের বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শতভাগ সাফল্য অর্জন করতে চাই। এজন্য সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।”
পুরস্কারের ঘোষণা
ব্যাংক এমডি জানান, কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের জন্য কর্মকর্তাদের পুরস্কার প্রদান করা হবে। এর ফলে কর্মীদের মাঝে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা তৈরি হবে এবং সামগ্রিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিতি
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) খান ইকবাল হোসেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সব ডিএমডি, প্রধান কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম), সব জিএম অফিস, প্রিন্সিপাল অফিস ও করপোরেট শাখার প্রধান, এবং দেশের বিভিন্ন শাখা ব্যবস্থাপকগণ।
অতীত কর্মসূচি
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক একটি ১০০ দিনের বিশেষ কর্মসূচি পালন করেছিল। সেই কর্মসূচির মাধ্যমে ব্যাংকটির বিভিন্ন সূচকে ইতিবাচক সাফল্য অর্জিত হয়, যা এবার নতুন কর্মসূচির জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে জোর
সোনালী ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী আয় আহরণে দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। বর্তমান কর্মসূচিতেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের মতে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখে। তাই এবার বিদেশে অবস্থানরত গ্রাহকদের জন্য ডিজিটাল চ্যানেল, দ্রুত সেবা এবং নিরাপদ লেনদেনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
আমানত সংগ্রহে নতুন পরিকল্পনা
অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য আমানত সংগ্রহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সোনালী ব্যাংক বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র, বিশেষ আমানত প্রকল্প ও ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালুর মাধ্যমে নতুন গ্রাহক আকর্ষণে কাজ করছে। এই ৯০ দিনের কর্মসূচিতে প্রত্যেক শাখাকে নতুন আমানত সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে।
রপ্তানি বাণিজ্যে সহায়তা
সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশি পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। নতুন কর্মসূচিতে রপ্তানি ঋণ বিতরণ, রপ্তানি গ্যারান্টি এবং আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজীকরণে বিশেষ সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
খেলাপি ঋণ আদায়ে কড়াকড়ি
খেলাপি ঋণ বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের বড় চ্যালেঞ্জ। সোনালী ব্যাংক এ সমস্যার সমাধানে কড়া অবস্থান নিয়েছে। কর্মসূচির আওতায় খেলাপি ঋণ আদায়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এবং যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করবে তাদের জন্য প্রণোদনা বা সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে (SDGs) সঙ্গতি রেখে সোনালী ব্যাংক পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং কার্যক্রমও চালু করছে। সবুজ ঋণ বিতরণ, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়ক প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন বাড়ানোর পরিকল্পনা এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কর্মীদের জন্য বিশেষ দিকনির্দেশনা
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কর্মীদের উদ্দেশে বলেন—
“আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি, তবে ২০২৫ সালের সব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের প্রতিটি কর্মকর্তা ও কর্মচারী দেশের অর্থনীতির অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।”
সামগ্রিক প্রভাব
অর্থনীতিবিদদের মতে, সোনালী ব্যাংকের এ ধরনের বিশেষ কর্মসূচি দেশের ব্যাংকিং খাতকে সক্রিয় করে তুলবে। বিশেষ করে রেমিট্যান্স আহরণ ও খেলাপি ঋণ আদায় দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
গ্রাহকদের প্রত্যাশা
গ্রাহকরা আশা করছেন, নতুন কর্মসূচির ফলে ব্যাংকের সেবা আরও সহজ ও দ্রুত হবে। বিশেষ করে ডিজিটাল লেনদেন, অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারে আরও সুবিধা যুক্ত হলে ব্যাংকটির প্রতি গ্রাহক আস্থা আরও বাড়বে।
✍️ উপসংহার
সোনালী ব্যাংকের ৯০ দিনের এই বিশেষ কর্মসূচি কেবল একটি লক্ষ্যপূরণের পরিকল্পনা নয়, বরং দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি কৌশলগত উদ্যোগ। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা, দক্ষতা এবং প্রযুক্তি নির্ভর সেবা নিশ্চিত করতে পারলে এ কর্মসূচি সফল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।