বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নতুন নেতৃত্ব: হাসনাত কাইয়ূম সভাপতি, ৭১ সদস্যের শক্তিশালী কমিটি ঘোষণা

বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ঘোষণা করল ৭১ সদস্যের নতুন নির্বাহী কমিটি

ঢাকা: বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন সম্প্রতি ৭১ সদস্যের নতুন নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেছে। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ূম, এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ব্যবসায়ী সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন।

গত শুক্রবার রাজধানীর জোয়ার সাহারার এসএকে মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিশেষ প্রতিনিধি সম্মেলনে এই নতুন কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হয়। সম্মেলন শেষে আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটি এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নতুন কমিটির নেতৃত্ব

নির্বাচিত কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতি হয়েছেন মাহবুবুর রহমান। সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন মাহমুদ জামাল, আবদুল্লাহ মহিউদ্দিন, আবদুল জলিল, নাসিমা রহমান, চিনু কবির, সাইদুল খন্দকার ও গোলাম শফিক।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন দিদার ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সোহেল, অর্থ সম্পাদক নাইমুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক ছামিউল আলম, মিডিয়া সম্পাদক এহসান আহমেদ, এবং ন্যায়পাল রায়হান কবীর।

নির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্যরা দেশের বিভিন্ন পেশাজীবী, সমাজকর্মী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। নতুন কমিটি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য প্রস্তুত।

গঠনতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার

সম্মেলনের এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল দলের গঠনতন্ত্র সংস্কার। নতুন গঠনতন্ত্রে দলের নামের শুরুতে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় সমন্বয় কমিটির বদলে জাতীয় কমিটি এবং নির্বাহী কমিটিতে সভাপতি-সেক্রেটারি পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে।

নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণে নতুন পদক্ষেপ:

  • আগামীতে দলের সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব বাধ্যতামূলক।
  • কোনো ছাত্র, যুব ও পেশাজীবী অঙ্গসংগঠন বা প্রবাসে শাখা না রাখার সিদ্ধান্ত।

এই পদক্ষেপকে দলের কেন্দ্রীকৃত ও কার্যকরী নেতৃত্বের দিকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কমিটির লক্ষ্য ও পরিকল্পনা

সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম সাংবাদিকদের বলেন,

“আমাদের প্রধান লক্ষ্য দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কার। আমরা একটি জবাবদিহিমূলক ও জনগণমুখী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে চাই। নতুন কমিটি এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন জানান,

“আমরা নারী ও যুবদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাই। আমাদের নতুন কমিটি দেশব্যাপী কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে।”

নতুন কমিটি দেশের বিভিন্ন জেলায় সফর করে স্থানীয় কমিটির সঙ্গে সমন্বয় সাধন এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করেছে।

সিনিয়র সহসভাপতি ও সহসভাপতিদের ভূমিকা

সিনিয়র সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান দলের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।

সহসভাপতিগণ স্থানীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন, অঙ্গসংগঠনের সমন্বয় এবং নীতি নির্ধারণে অংশ নেবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সহসভাপতিদের অভিজ্ঞতা নতুন কমিটিকে দেশব্যাপী শক্তিশালী কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়ক হবে।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য পদাধিকারীদের দায়িত্ব

  • দিদার ভূঁইয়া (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক): প্রশাসনিক কার্যক্রম তদারকি।
  • মোহাম্মদ সোহেল (সাংগঠনিক সম্পাদক): সদস্য নিবন্ধন, প্রশিক্ষণ ও কমিটি সম্প্রসারণ।
  • নাইমুল ইসলাম (অর্থ সম্পাদক): আর্থিক সম্পদ ও বাজেট ব্যবস্থাপনা।
  • এহসান আহমেদ (মিডিয়া সম্পাদক): দলের বার্তা ও কার্যক্রম প্রচার।
  • ছামিউল আলম (দপ্তর সম্পাদক): অফিস পরিচালনা ও নথিপত্র সংরক্ষণ।
  • রায়হান কবীর (ন্যায়পাল): নীতিমালা ও সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা নিশ্চিতকরণ।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কার নিয়ে কাজ করে আসছে। নতুন কমিটি গঠনকে দলটির সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নারী ও যুবদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যক্রমে সংহতি আনার এই পদক্ষেপগুলি দেশের রাজনৈতিক সংস্কারে দৃষ্টান্তমূলক নেতৃত্ব প্রদর্শনের সম্ভাবনা বহন করে।

ভবিষ্যৎ উদ্যোগ ও প্রত্যাশা

নতুন কমিটি দেশের নাগরিকদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমাজে প্রগতিশীল সংস্কার আনার লক্ষ্যে শিক্ষা, সেমিনার, কর্মশালা ও রোডশো আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে।

দল জানিয়েছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তারা দেশের বিভিন্ন জেলায় সফর করবে এবং স্থানীয় কমিটিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।

উপসংহার

নতুন ৭১ সদস্যের নির্বাহী কমিটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে এক নতুন দিগন্ত খুলতে যাচ্ছে।

  • নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা
  • নারী ও যুবকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ
  • কার্যক্রমে কেন্দ্রীয়করণ

এই তিনটি দিক দেশের নাগরিকদের মধ্যে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে।

কমিটির ঘোষণা প্রকাশের পর সদস্যরা জানিয়েছেন,

“আমরা নতুন নেতৃত্বকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি এবং দেশের জন্য গঠনমূলক ও সংস্কারমুখী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করব।”

বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নতুন কমিটি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের পথে এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে প্রস্তুত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *