পরোয়ানাভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা সেনা হেফাজতে, একজন এখনো লাপাত্তা!

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় নতুন মোড় — সেনা সদর জানালো বড় পদক্ষেপ
📍 নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানাভুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে সেনা হেফাজতে, তবে একজন কর্মকর্তা এখনো লাপাত্তা।
শনিবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসের মেস আলফায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
🔍
লাপাত্তা মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ
সর্বশেষ সিলেটের স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকস (এসআইএন্ডটি)-এর কমান্ড্যান্ট পদে ছিলেন কবীর আহাম্মদ।
তিনি ৯ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন।
সেনা সদর জানিয়েছে, তাঁকে খুঁজে বের করতে ডিজিএফআই, এনএসআই ও বিজিবিকে সতর্ক করা হয়েছে যাতে তিনি দেশত্যাগ করতে না পারেন।
⚖️
২৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা
গত বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তিনটি মামলায় মোট ৩২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
তাঁদের মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা, বাকি ৭ জনের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, এবং র্যাব-পুলিশের পাঁচজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।
📌 এই মামলাগুলোর দুটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত গুম ও নির্যাতন-সংক্রান্ত, আরেকটি মামলা জুলাই অভ্যুত্থানকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় দায়ের করা হয়।
🏛️
সেনা সদর দপ্তরের পদক্ষেপ
মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান জানান,
“৮ অক্টোবর পরোয়ানা জারির পরই সেনা সদর পদক্ষেপ নেয়।
চাকরিরত ও এলপিআরে থাকা কর্মকর্তাদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে সদর দপ্তরে হাজির হতে বলা হয়েছিল।
মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ছাড়া সবাই এসেছেন এবং তাঁরা বর্তমানে সেনা হেফাজতে আছেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আইন ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইন অনুযায়ীই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
📣
ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবি: ‘অবিলম্বে গ্রেপ্তার করুন’
দুই ছাত্র সংগঠন —
👉 বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ
👉 বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
— পৃথক বিবৃতিতে সেনা কর্মকর্তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেছে।
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ বলেছে,
“পরোয়ানাভুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারে বিলম্ব ন্যায়বিচারের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করছে।
গণ-অভ্যুত্থানের পর দায়মুক্তির সংস্কৃতি আমরা চাই না।”
অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ পাঠান বলেন,
“ফ্যাসিবাদী আমলে সেনাবাহিনীর কিছু বিচ্যুত কর্মকর্তা গুম, খুন ও নির্যাতনের মতো অপরাধে জড়িয়েছিলেন।
এই অপরাধীদের বিচার না হলে সেনাবাহিনীর মর্যাদা কলঙ্কমুক্ত হবে না।”
⚔️
বিচার কোন আদালতে হবে?
সামরিক নাকি দেওয়ানি আদালতে হবে এই বিচার —
এ প্রশ্নে মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন,
“সেনাবাহিনী দেশের আইন ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
আইনি নির্দেশনা অনুযায়ীই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সেনা কর্মকর্তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত করা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ।
🕊️
ন্যায়বিচারের পথে বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২২ অক্টোবরের মধ্যে ৩২ আসামিকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছে।
এর মধ্যে সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে কি না — তা এখনো পরিষ্কার নয়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে,
“জুলাই অভ্যুত্থানের পর যে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকার করা হয়েছিল,
এই মামলাগুলোই তার বাস্তব পরীক্ষায় পরিণত হয়েছে।”
🔔
সেনা সদর: আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, বিচ্যুতদের বিচারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ
সেনাবাহিনী জানিয়েছে,
“আমরা কখনোই আইনের ঊর্ধ্বে নই।
বিচ্যুত কিছু ব্যক্তির কারণে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হোক, তা চাই না।
স্বচ্ছ তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।”
🇧🇩
উপসংহার
বাংলাদেশ এখন এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে—
সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ও ন্যায়বিচারের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই বড় চ্যালেঞ্জ।
জাতি এখন অপেক্ষায়,
আইনের শাসন কি সত্যিই প্রতিষ্ঠিত হবে, নাকি আবারও দায়মুক্তির সংস্কৃতি ফিরে আসবে?